আমি ব্যক্তি হিসেবে অবিবাহিত। কিছু কিছু কথাবার্তা মানুষকে বলতে খুবই লজ্জা লাগে। সেজন্য অনেক কিছুই মানুষকে বলা হয় না। তবে, লিখতে যেহেতু সমস্যা নেই। তাই, ব্লগেই আপনাদের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম।
বিবাহের মাধ্যমে দুইজন পুরুষ ও নারী একে অপরের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটজনে পরিণত হয়। আর আকদ তথা ইজাব কবুলের মাধ্যমেই তাদের পরস্পরের মধ্যকার দৈহিক সম্পর্কের বৈধতা স্থাপিত হয়। আমরা জানি স্বামী স্ত্রীর ভিতরে কোন পর্দা নেই। তারা একে অপরের সামনে একেবারেই ফ্রি ও স্বাধীন। তাদের শরীরের কোন অঙ্গ অপর থেকে ঢেকে রাখার কোন বাধ্যবাধকতা ইসলামে দেয়া হয়নি।
অথচ, অনেকেই বলে থাকেন যে, স্বামী যেন তার স্ত্রীর বিশেষ অঙ্গ এবং স্ত্রী যেন তার স্বামীর বিশেষ অঙ্গ না দেখে। এটা সর্বদা ঢেকে রাখতে হবে।
আসলে, এগুলো সবই কুসংস্কার। বরং, একান্তে থাকলে এ ব্যাপারে তারা ১০০% স্বাধীন। তারা কিভাবে থাকবে সেটা তাদের ব্যাপার।
বিবাহের একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে-একে অপরকে খারাপ পথ থেকে দূরে রাখা। অতএব, আরেকজনের প্রিয় পন্থা অবলম্বনের জন্য তাকে সুযোগ দেয়া উচিত। যেন সে শুধুমাত্র নিজের সংগী বা সঙ্গিনীর দিকেই আকৃষ্ট থাকে।
অতএব, কিসে অপর সংগীর বেশী বেশী তৃপ্তি আসবে সেদিকে অন্যের খেয়াল রাখা কর্তব্য এবং তাকে সে পন্থা অবলম্বনের সুযোগও দেয়া উচিত। অন্যথায় সে উক্ত সংগীর উপর বিতৃষ্ণ হয়ে যেতে পারে। ফলে, হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কয়েকদিন আগে একজন লোকের সাথে কথা হচ্ছিল- সে বলল: একজন আলেম নাকি তাকে বলেছেন- স্ত্রীর সামনে যেন তার নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত অনাবৃত না হয়ে যায়।
আমি আশ্চর্য হলাম। উক্ত আলেমের একথা বলার কারণ কি? জানলাম যে, এর পিছনে একটিই মাত্র কারণ। আর তা হল- একটি জাল হাদীসের ব্যাপকতা।
রাসুল (সাঃ) এর নামে বলা হয়- "তোমাদের কেউ যেন নিজ স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলনের সময় স্ত্রীর বিশেষ অংগের দিকে দৃষ্টি না দেয়, কেননা, তা দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার কারণ হয়।"
আসলে, এটা কোন হাদীস নয়; বরং, রাসুল (সাঃ) এর নামে রটানো মিথ্যা কথা।
অতএব, দৈহিক মিলন, গোসল কিংবা অন্য যেকোন সময় স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের শরীরের সমস্ত অঙ্গ এমনকি বিশেষ অংগের দিকেও তাকাতে পারবে। ইসলামী শরীয়তে এ ব্যাপারে কোন বাধা নেই।
ইসলামিক স্কলারদের মতে-স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের সমস্ত শরীরের দিকে তাকানো ও স্পর্শ করা বৈধ এমনকি বিশেষ অঙ্গও। (মুগনী, আল কাফি, মাউসুয়াতুল ফিকহিয়া)
হাশিয়ায়ে দাসুকীতে বলা হয়েছে- স্বামী স্ত্রীর বিবাহ অটুট থাকাবস্থায় একে অপরের দেহের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা এমনকি বিশেষ অঙ্গ দেখাও বৈধ। একে অপরের বিশেষ অঙ্গের দিকে তাকালে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার যে বর্ণনা রয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। (হাশিয়ায়ে দাসুকী)
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী তার সিলসিলাতে লিখেছেন- স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্কের ভুমিকা পর্বের প্রাথমিক একটি স্তর হল- একে অপরের বিশেষ অঙ্গ দেখা, স্পর্শ করা ইত্যাদি। এরপরেই রয়েছে দৈহিক মিলন। আর, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু তাদের মধ্যকার দৈহিক সম্পর্কটাকেই বৈধ করে দিয়েছেন, অতএব সেদিকে তাকানো নিষিদ্ধ হওয়া অযৌক্তিক। কোন সুস্থ মস্তিষ্ক বিশেষ অঙ্গ দেখা অবৈধ হওয়াকে যৌক্তিক বলে মেনে নেবে না।
অতএব, সেদিকে তাকানো নিষেধ হওয়ার বর্ণনা সহীহ নয়। বরং, বিভিন্ন দলীল প্রমাণ সেদিকে তাকানোর বৈধতার পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়।
উল্লেখ্য যে, পায়ুপথ তথা পিছনের রাস্তায় সর্বাবস্থায় মিলন অবৈধ এবং যারা এরূপ করে তাদেরকে হাদীসে অভিশপ্ত বলা হয়েছে।

Dollar to
Taka Converter
Social Plugin