শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ফাঁসিতে ঝোলানোর দুই ঘণ্টা পর কাশিমপুর কারাগারের ফটক দিয়ে বের হয় মীর কাসেমের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স।
স্বজনরা শেষ দেখা করে আসার পর রাত ৯টার দিকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স কারাগারের ভেতরে ঢুকেছিল।
রাত সাড়ে ১২টায় ওই তিনটি অ্যাম্বুলেন্সই বেরিয়ে আসে। তার সামনে ছিল র্যাব-পুলিশের ছয়টি এবং পেছনে ছিল আরও তিনটি গাড়ি। এই গাড়িবহরের পেছনে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও ছিল।
ফাঁসির ঘণ্টাখানেক আগে থেকে কারাগারে অবস্থানরত গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুণ-অর রশীদ বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, “লাশ যেখানে যাবে, সে পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।”
এর আগে রাত ১১টার দিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর নিশ্চিত করে কাশিমপুরের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক প্রশান্ত কুমার বণিক কারাফটকে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মীর কাসেমের লাশ মানিকগঞ্জে পাঠানো হবে।
মীর কাসেমের মানিকগঞ্জের বাড়ি চালা গ্রামে ইতোমধ্যে পৌঁছেছেন তার স্বজনরা, যারা বিকালেই কাশিমপুরে কারাগারে তার সঙ্গে শেষ দেখা করে এসেছিলেন।
মীর কাসেমের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে হলেও তার পৈত্রিক এলাকা মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। ১৯৫২ সালে তার জন্মও সেখানে।
পৈত্রিক বাড়ি সূতালড়ি ইউনিয়নের মুন্সীডাঙ্গী গ্রামে হলেও নদী ভাঙনে ভিটে হারিয়ে যাওয়ার পর চালা ইউনিয়নের চালা গ্রামে জমি কিনেছিলেন কাসেম।
মীর কাসেমের বাড়ি চালা গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার দূরে ঘিওর উপজেলার কলতাবাজারে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না তারা।
সেখানে থাকা ঘিওর থানার ওসি মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, রাত ১০টা ৫০ মিনিটে চারটি গাড়িতে করে মীর কাসেমের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই পুত্রবধূসহ ৪০ জনের মতো স্বজন চালা গ্রামে গেছেন।
মানিকগঞ্জ শহর থেকে হরিরামপুরের চালা গ্রামের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারের মতো। শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ঘিওর উপজেলার কলতাবাজারের উপর দিয়ে যেতে হয় চালা গ্রামে।
মানিকগঞ্জ ডিএসবির সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান ও ঘিওর থানার ওসি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশ রয়েছেন কলতাবাজারে।
মীর কাসেমের স্বজনরা কলতাবাজার পৌঁছেন পাঁচটি গাড়ি নিয়ে। ওই সময় সেখানে পুলিশ তাদের থামিয়ে ১৫ মিনিটের মতো কথা বলে। পরে চারটি গাড়ি যেতে দেওয়া হয়।
রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ছেলে মীর কাসেম ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর জামায়াতে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি নানা ব্যবসার মাধ্যমে দলটির ‘আর্থিক মেরুদণ্ডে’ পরিণত হন।মীর কাসেম আলী
তিনি ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন তিনি।
রাবেতা আল ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মীর কাসেম দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। কেয়ারি গ্রুপের কর্ণধার হিসেবেও তার নাম আসে।
মীর কাসেম চালা ইউনিয়নে কেনা জমিতে বাড়ি না করলেও একটি মসজিদ তৈরি করেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে তিনি ওই এলাকা থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীও হতে চেয়েছিলেন।
এদিকে মীর কাসেমকে মানিকগঞ্জে দাফন করতে তার স্ত্রীর পরিকল্পনার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলে সন্ধ্যার পর জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
তাদের সমাবেশ থেকে এই যুদ্ধাপরাধীর লাশ মানিকগঞ্জে না নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
মুক্তিযোদ্ধা তোবারক হোসেন লুডু বলেন, “মীর কাসেম আলীর জন্ম মানিকগঞ্জে হওয়ায় আমরা লজ্জিত। শুনতে পাচ্ছি তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর হরিরামপুরের চালা গ্রামে মরদেহ দাফন করা হতে পারে।
“একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি জানাচ্ছি, এই কুলাঙ্গারের মরদেহ যেন মানিকগঞ্জে দাফন না হয়।”
0 Comments