Ticker

6/recent/ticker-posts

প্রথম সন্তান কবে হবে

বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েদের যে কথাটি শুনতে হয় সেটি হচ্ছে, সন্তান নিচ্ছেন কবে? বিয়ের মাধ্যমে নারীর সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগতে প্রবেশ। নতুন এই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর আগেই যেন তাকে নতুন আরেক পরিবেশে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রতিটি নারীর জীবনে বিয়ের চেয়েও সন্তান নেওয়ার মধ্যদিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সন্তান নেওয়ার আগে প্রত্যেক নারীর শারীরিক ও মানসিক পূর্ণ বিকাশ প্রয়োজন। অল্পবয়সে সন্তান নিতে গিয়ে অনেক নারীকেই অকালে প্রাণ হারাতে হয়। অনেক সময় নিজেদের ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে বাচ্চা নিতে বেশি দেরি করলে তা সন্তান না হওয়ার পেছনে কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিয়ের কতদিন পর একজন নারীর সন্তান নেওয়া উচিত এ প্রসঙ্গে নববিবাহিত দম্পতির কী মতামত তা জানতে কথা হচ্ছিল সোমার সাথে।
 
তিনি বলেন, আমি আমার অন্যান্য বান্ধবীর চেয়ে একটু দেরিতে বিয়ে করেছি। আমার ২৮ বছর হতে চলল। আমি ও আমার স্বামী, আমরা দুইজনই চাকরিজীবী। আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে আছি। আমার স্বামী ব্যাংকে। আমাদের বিয়ের পর আট মাস হতে চলল। যখন আমি বিয়ে করি সেসময় অফিসে ছুটি নিতে গেলে আমার সহকর্মীরা বলে, আপনাদের, মেয়েদের কি মজা। 

এখন বিয়ের জন্য ছুটি নিচ্ছেন, দুদিন পর বাচ্চার জন্য ছুটি নেবেন। যেন সেটি আমার এক অপরাধ। অনেক সময় অবিবাহিত নারীদের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সামনে বিয়ে ও বাচ্চার কথা চিন্তা করে অফিসের বড় কর্মকর্তারা হয়তো চাকরি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এমনকি সন্তান নিতে গিয়ে চাকরিক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় পিছিয়েও পড়তে হয় নারীদের। কিন্তু এসব চিন্তা করলে একজন নারীর কখনোই সন্তান নেওয়া সম্ভব না। তাই সমাজের এই বৈষম্যমূলক মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। একটু দেরিতে বিয়ে করলে এমনি নারীদের সন্তান নেওয়ার জন্য কম সময় থাকে। সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন। তাই বিয়ের পর সন্তান নেওয়ার আগে পরস্পরকে বোঝার জন্য কমপক্ষে এক বছর সময় নেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। যা নারীকে সন্তান নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে। প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করলে পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করার সময়টি আরো বেশি পাওয়া যায়। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মতামতের ভিত্তিতে প্রথম সন্তান নেওয়া উচিত।
 
নববিবাহিত দম্পত্তির প্রথম সন্তান কবে নেয়া উচিত এবং প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য কত হওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে কথা হচ্ছিল ওজিএসবির (অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ) প্রেসিডেন্ট ও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজিক্যাল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বাল্য-বিবাহের হার এখনো অনেক বেশি। তাই নারীদের ক্ষেত্রে প্রথম যেটা লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো বিয়ে যেন ১৮ বছরের পর এবং সন্তান যেন কখনই ২০ বছরের আগে না হয়। ২০ বছরের আগে নারীর শারীরিক বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয় না। ফলে এর আগে সন্তান নিলে বাচ্চার নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগ ও সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকসময় অ্যাবোরসন হয়ে যায়। বাচ্চার বডি স্ট্রাকচার ঠিক মতো হয় না। শিশু হতে গিয়ে মাথা আটকে যায়। আমাদের দেশে একজন অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে বিয়ে করলে তার বয়স ২৫ পেরিয়ে যায়। বিয়ের পর একবছর ঘোরাঘুরি করতে করতেই কেটে যায়। তাই ২৬ বছরের পর দেরি না করে সন্তান নিয়ে নেওয়া উচিত। দুই সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে দুই থেকে তিন বছর পার্থক্য রাখা উচিত। যা মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দরকার। ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলে দেখা যায় সন্তান আর হতে চায় না। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এসব নানা রোগ দেখা যায়, আর বাচ্চা এবনরমাল হওয়ার আশংকাও থাকে।
 
তাই প্রথম সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের বয়স কত, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেয়ের বয়স ২০ বা ২১ বছর হলে তার কিছুদিন অপেক্ষা করে সন্তান নেওয়া উচিত। কিন্ত মেয়ের বয়স ২৮ হয়ে গেলে ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে দেরি করা উচিত না। আমার কাছে প্রতিদিন অনেক রোগী আসে। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের এমন অনেক মেয়েকে পাই যে ১৮ বছর বয়সেই দুই বাচ্চার মা। বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করি, এত কম বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কেন? বাচ্চা নিতে দিলেন কেন? তাদের সহজ সরল উত্তর থাকে- যেমন, অনেক ভালো জামাই পেয়েছি, মেয়ে বেশি সুন্দরী, রাখতে পারিনি। মেয়ের বাচ্চাও নিতে হয় স্বামীর ইচ্ছায়। অল্প বয়সে মা হলে বাচ্চা ও মা দুজনেরই ক্ষতি হয়। অনেক সময় বাচ্চা মারাও যায়।
 
এজন্য প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় ৮৩ হাজার সন্তান হতে গিয়ে এবং ৬ হাজার মা বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এটা একটা ভয়ংকর অবস্থা। একমাত্র বাল্যবিবাহ রোধ ও উপযুক্ত বয়সে সন্তান নিলে এ হার কমতে পারে। কখনো কখনো শহরে দেখা যায় বিদেশে পড়তে যাবে বা চাকরির কথা চিন্তা করে নারীরা প্রথম সন্তান নষ্ট করতে চান। কিন্তু প্রথম সন্তান কখনোই নষ্ট করা যাবে না। তাই প্রতিটি নবদম্পত্তির প্রথম সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে কাউন্সেলিং করা দরকার এবং সে পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান নেওয়া উচিত।
Reactions

Post a Comment

0 Comments