Ticker

6/recent/ticker-posts

ডিভোর্সের পর মেয়েরা কেন একা থাকতে পারে না? উত্তরে বেরিয়ে এল চমকপ্রদ তথ্য!

ডিভোর্সের পর মেয়েরা কেন একা থাকতে পারে না? উত্তরে বেরিয়ে এল চমকপ্রদ তথ্য!


ডিভোর্সের পর মেয়েরা – ডিভোর্সের পর একজন নারী সাধারণত অনেক বেশি হীনমন্যতায় ভুগতে থাকেন। অধিকাংশ নারীই বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীদের সাথে কোন আড্ডা কিংবা পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অসংখ্য মেয়ে এই ধারণাটির কারণে সম্পূর্ণ জীবনটি কাটিয়ে দেন কষ্ট আর হতাশায়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধারণাটি কতটুকু সত্যি? বা এই ধারণাটা নিয়ে কী ভাবেন বর্তমানের নারী-পুরুষ?
যাদের কখনো ডিভোর্স হয়নি বা খুব কাছের কারো ডিভোর্স দেখা হয়নি তাঁরা হয়তো কখনোই বুঝতে পারবেন না মূল অবস্থাটি। কিন্তু যারা গিয়েছেন বা এখনও যাচ্ছেন এই পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে? হ্যাঁ, একমাত্র তারাই বলতে পারবেন যে সত্যিকারের পরিস্থিতিতি কেমন।
আর তাই আমার প্রশ্নটি ছিল এমন কয়েকজন নারীর কাছে, যিনি ডিভোর্স পরবর্তী সময়টি মোকাবেলা করেছেন বা খুব কাছের কারো ডিভোর্স দেখেছেন।
আমি জানতে চেয়েছিলাম এই ব্যাপারে তিনি কী মনে করেন, জানতে চেয়েছিলাম তাঁদের জীবনের ঝড়ঝাপটা গুলোর কথা। কী জবাব মিল? তাঁদের মন্তব্যগুলো নাহয় হুবহু-ই তুলে দিচ্ছি পাঠকের জন্য। বাকিটা পাঠক নিজ বিবেক দিয়ে বিবেচনা করবেন।
কাজী নাজিয়া মুশতারী (৩০)
নারী উদ্যোক্তা , রাজশাহী।
আমি থাকি আম্মুর সাথে.. সেরকমভাবে কোন সমস্যায় পড়িনি, বিকজ অফ আমার ভয়াবহ অ্যারোগেন্ট ইমেজের জন্য। এবং এটা আমি নিজেই বানিয়েছি। আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে আমি অচ্ছুত হয়ে গেছি, আমার কেউ নাই- এরকম লুতুপুতু ইমেজ বানালে যে কেউ বিরক্ত করতে আসবে।আর সবচে মজার বিষয় হচ্ছে আমার ব্যাপারটা থানা পুলিশ জেল অব্দি গড়িয়েছিল, কিছুটা হলেও শাস্তি দিতে পেরেছিলাম, তাই সবাই এই ভয়টাও পায় কীভাবে লাল দালানে চালান দিতে হয় সেটা আমি জানি, তাই আমাকে না ঘাটানোই ভাল।আর একা থাকার আরেকটা বিষয় নিয়ে সমস্যা হয় সেটা হলো বাসাভাড়া কেউ দিতে চায়না, আবার বাচ্চার স্কুলে অন্য মহিলাদের অযথা কৌতুহল এবং সব সময় নিজেকে একটু সাবধানে রাখতে হয় যাতে কেউ গুজব রটাতে না পারে।
তবে এগুলাও মেন্টেন করা যায়। আমরা কেউ ছোট বাচ্চা তো না যে নিজের অসুবিধা বুঝবোনা। একা থাকার সবচে বড় শর্ত হচ্ছে স্বাবলম্বী হওয়া, স্বাবলম্বী যে কেউ একা থাকতে পারে। কারো অনুগ্রহে বা অধীনে বাঁচতে গেলেই একা থাকাটা আর হয়ে ওঠেনা।
সাবরিনা খান (৩৪)
ব্যাংকার, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা।
আমি ঠিক একা না। মা সাথে থাকে। দোকা থাকা অবস্থাই মা আমার সাথে থাকতো। তবে মা আমাকে আবার বিয়ে করতে আগ্রহী নই বলে ফ্ল্যাট কিনতে বলে। সে সহ সবাই ভয় দেখায় মা চিরজীবন থাকবে না, তখন আমার থাকার জায়গা থাকবেনা। আমি ভাবছি শুধু থাকার জায়গার জন্য কি বিয়ে করা লাগবে!
শাফিয়া (২৮)
গৃহিণী, মিরপুর
সমাজের মানুষ তো একা থাকলেও বলবে, দোকা থাকলেও বলবে। একা বা দোকা থাকা সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার হওয়া উচিৎ। তবে সমাজের কথাটা একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো ও নয়। কারণ-
১. প্রতিটা মানুষেরই একজন সংগী লাগে। যে সুখে দু:খে পাশে থাকবে।
মানছি মেয়েরা অনেক স্ট্রং, তারপরও, লাগে কিন্তু একজনকে। শারীরিক মানসিক চাহিদা পূরণের জন্য। অনেকেই হয়তো শারীরিক চাহিদা উপেক্ষা করে থাকতে পারে (রেশিওটা অনেক কম কারণ শারীরিক সম্পর্ক একবার হলে সেটাকে অগ্রাহ্য করাটা টাফ), অনেকে না পারায় অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
আবার কেউ হয়তো মানসিক সাপোর্ট এর জন্যও একা থাকতে চায় না।
২. এই সমাজের মানুষই একা থাকতে দিবে না। একা মেয়ে সাবলেটে থাকলেও খারাপ, একা থাকে। আবার চাকরি খুঁজতে গেলেও আগে বিছানায় যাওয়ার প্রস্তাব পায় তো বেশিরভাগ মানুষই
যেহেতু সুযোগ সন্ধানী তারা তো এভাবেই দেখবে যে একা মানেই একা না, নিশ্চয়ই তার অবৈধ সম্পর্ক আছে। এই বাঁকা চোখটা এড়িয়ে ফাইট করতে ফ্যামিলি সাপোর্ট লাগে যেটা অনেকেই পায়না।
৩. বেশিরভাগ পরিবারের কাছেই এখনো ডিভোর্সি মেয়ে মানেই বোঝা। তাকে যে কোন ধরনের সাপোর্ট দিতে তারা নারাজ।
বাট আমার নিজের যা মনে হয়েছিলো এবার তাই বলি। প্রতিটা মেয়েই নিজের একটা সংসারের স্বপ্ন দেখে। খুবই স্ট্রং একটা কারণে আমার প্রথম বিয়েটা টেকেনি। ৭ বছর চেষ্টা করেছি টেকানোর জন্য। বাট যেটা হওয়ার নয় সেটা হয়না।
প্রথমে ভেবেছিলাম স্বাবলম্বী হই। বাট যেখানেই জবের জন্য যেতাম, আকারে ইংগিতে আমাকে বিছানায় শোয়ার আভাস দিতো। নিজের প্রতিই একসময় ঘেন্না লাগা শুরু হলো, যে আমারই নিশ্চয় কিছু একটা প্রবলেম, নাহলে সবাই এই নজরেই কেন দেখবে।
তাই একা থাকার চিন্তা বাদ দিয়ে নতুন করে সংসার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম কারণ বিয়ে ভাংগাতে তো আমার দোষ ছিলো না। স্বাভাবিক একটা জীবন চেয়েছিলাম। কারণ তখন হয়তো বয়স কম ছিলো। বাট একটা সময় বয়স বাড়বে।
শেয়ারিং কেয়ারিং এর জন্য হলেও জীবনে কাউকে প্রয়োজন। ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণের স্বাদ শেয়ার করার জন্য হলেও কাউকে প্রয়োজন। আর আমাদের ধর্মেও কোথাও লেখা নেই যে ডিভোর্স হলে আর বিয়ে শাদি করা যাবে না। বরং সংসারের তাগিদই দেয়া আছে। ব্যক্তির সর্ব প্রকার শান্তির জন্যই আমার মনে হয় একা থাকাটা ঠিক নয়।
তবে সবারই এমনটা মনে হবে তা নয়, কারো সাপোর্ট পাইনি তাই হয়তো এমন মনে হয়েছে, ফ্যামিলি সাপোর্ট পেলে হয়তো অন্যরকম ভাবতাম। আসলে যার যার ভাবনা তার তার কাছে যেটা ডিপেন্ড করে সিচুয়েশন এর উপর।
নাজমুন নাহার (২৮)
সেন্ট্রাল হসপিটাল
ব্রাক্ষনবাড়ীয়া।
নিজের সমস্যাটাই বলি, সাত বছর সংসার করার পর হ্যাজবেন্ডের সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম এবং পারিবারিক কুটনীতির চালে ডিভোর্স হয়ে যায়।
দুবছর একা আছি, প্রাইভেট হসপিটালে জব করি। সমাজ পারিবারিক অবস্থানের কারণে একা থাকা সম্ভবনা পারিবারিক সাপোর্ট কখনোই পাইনি।
বরং পরিবার এবং আশপাশ থেকে শুনতে হয় মা-বাবা চিরদিন থাকে না, আবার নতুন করে চিন্তা কর, ভাইবোনরা সবসময় দেখবে না, তাছাড়া সমাজ কি বলবে? আমার প্রশ্ন কেন? সমাজ কি আলাদা কিছু, সমাজ তো আমরাই তৈরী করি।
ভাইদের সংসার হবে, বোনের বিয়ে হবে, ঘরে ডিভোর্সী বোন থাকলে সমস্যা- এই ধারণা সমাজে পরিবারে কি আমরা ছড়িয়ে দিচ্ছিনা? হ্যাঁ, দিনশেষে নিজেকে একা লাগে মনে হয় পাশে কাউকে দরকার এই দরকারটা কি শুধু সামাজিক পরিচিতির জন্য নাকি নিজের ভাল থাকার জন্য?
সমাজের জন্য রিলেটিভদের জন্য তো সাত বছর নিজেকে সুখী কাপল সাজিয়েছি তাতে নিজে কতটুকু হ্যাপি হয়েছি… দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।
প্রাচুর্য না থাকুক আত্মতৃপ্তি মানসিক শান্তি তো মেলে। আতংকিত জীবন থেকে মুক্তি। হ্যাঁ, এটা সত্যি পারিপার্শ্বিক সব অবস্থা চিন্তা করে একা থাকাটা এই সমাজে নিরাপদ না। ধন্যবাদ আপু।
রোদসী জামান
সরকারি সাদত কলেজ,টাঙ্গাইল।
ডিভোর্সী মেয়েদের আমাদের সমাজ ভাল চোখে দেখে না, আপু। এমনকি আত্নীয় সজন ও প্রতিবেশীদের কথা জীবন অতিষ্ট করে দেয়। প্রায় আড়াই বছর হল ডিভোর্সের এখনও শুনতে হয় আর একটু সহ্য করে গেলেই নাকি পারতাম।
কিন্তু আমি জানি ওটা আমার জীবনের সব থেকে ভাল সিদ্ধান্ত ছিল। আর একা থাকা না থাকা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। তুমি যদি মুভ অন করতে রেডি থাকো আর এমন কাউকে খুঁজে পাও যে তোমাকে বুঝে,তোমাকে সন্মান করে তাহলে কেন তার সাথে থাকবে না?
ফারিয়া রিশতা (২৫)
মিরপুর, ঢাকা।
ডিভোর্সের পর প্রথম যেটা ফিল করতাম সেটা হল শূন্যতা, মনের মধ্যে বিশ্বাস ভঙ্গের হাহাকার। এমন এক সিচুয়েশনে ডিভোর্স হল, অফিসের কাজে ঢাকায় থাকা লাগবে, একা! ছোট ভাইটা সাথে থাকত কিন্তু ও বেচারা নতুন ভার্সিটি লাইফ আর এই ডিভোর্স এর মারপ্যাঁচ বোঝার ক্ষমতাও তার নাই। ডিভোর্সটা সম্পূর্ন আমার ডিসিশন ছিল, বাবা-মা সাপোর্ট এ ছিলেন।
তারপর থেকে দিব্যিই একা একাই আছি। ইভেন গত কয়েকমাস সম্পূর্ণ একাই থাকছি। এক দিক দিয়ে ভাল হয়েছে সবার চেয়ে দূরে থেকে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে পেরেছি। কিন্তু চেনাজানা জায়গাগুলাতে যেতে খুব আনইজি লাগে।
স্পেশালি অতি উতসাহী আত্বীয় স্বজনদের বাসায় যেতে আতংক লাগে। মনবল ভেঙে দেওয়ার জন্য তারাই যথেষ্ট। এইবার হল মেইন পার্ট যেটা লিখব বলে এত কিছু লেখা – ফেসবুক ইনবক্স বা মোবাইল মেসেজেস।
কিছু পুরুষের আসল রূপ দেখা হয়ে গেছে ডিভোর্সি হওয়ার সুবাদে। তাঁদের ভাষ্যমতে ডিভোর্সি মেয়েদের একা থাকতে শারীরিক ভাবে খুব কষ্ট হয় আর তাদেরকে সাপোর্ট দেওয়া ইনাদের দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন। আর সেই মানুষগুলা চেনাজানা মানুষগুলাই বেশি!
আপু, একা থাকা কঠিন কিছু না। আমার পুরা ডিভোর্সের লড়াই একা আমি কোর্টে গিয়ে লড়েছি যখন আমার বয়স মাত্র ২৪ ছিল। একা চাকরি করেছি, একা একটা বাসা নিয়ে থেকেছি। কিন্তু আমার মতে তার জন্য যথেষ্ট শক্ত হতে হবে।
প্রথমে আমিও ২ বার সুইসাইড করতে গেসিলাম। বাবা মা, কাছের বন্ধুদের সাপোর্ট ছিল বলে সারভাইভ করতে পেরেছি। এখন তো আরো ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ্‌। কিন্তু হ্যাঁ, মনে মনে নিজের একটা গুছানো সংসারের স্বপ্ন সেই কৈশোর কাল থেকেই দেখে এসেছি, এখনো দেখি । তবে এবার সেটা এমন একজন মানুষ এর সাথে যে আমাকে ভালবাসবে।
ড: মোহসিনা খান (৩৩)
চিকিৎসক, উত্তরা।
আমি তো একা নই, পুরো ফ্যামিলির সাথে থাকি আপু.. মা সবচেয়ে বেশী সাপোর্ট দেয় বলে দরকার নাই বিয়ে করার .. নিজেকে প্রতিস্ঠিত কর জীবনে এ পুরুষ দরকার নাই..
আমার ছোট ভাই আমারে সারাজীবন আগলে রাখতসে এমন করে যেন আমি তার ছোট্ট বোন.. আমার ঐ কূৎসিত জীবনের চাইতে এই জীবন আমার অনেক সুখের আনন্দের ..আমি ভাল আছি।
নাজিয়া ইসলাম (২৬)
সহকারী শিক্ষক, কেডিএ কলেজ,খুলনা।
আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে,অনেক স্ট্রাগল করে এ পর্যন্ত আশা..আমার মা ডিভোর্সড না হওয়া সত্ত্বেও সেপারেশনে থেকেছেন। আমার নানুবাড়ীতে থেকে আমাকে সিংগেল মাদারের মতন করে বড় করেছেন..আমার ২বছর ৯ মাস বয়স থেকে..
তবে এখানে সেপারেশনের ডিসিশনে যাওয়ার আগে অবশ্যই অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন,কারণ যে যাই বলুক টাকা ছাড়া জীবনযাপন আসলেই অসম্ভব। আর হ্যাঁ, বিবাহিত হয়েও পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান করতে পারছি না বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো বাবা,মামা এবং স্বামীর খোটা শুনতে হচ্ছে বৈকি…
মা আমার সাথেই থাকেন। তার ছেলে সন্তান নেই..বাবার আলাদা পরিবার রয়েছে। এই বৈরী জীবনে মা কখনওই নিজের কথা ভেবে বাবার মতন সুখ খুঁজে নেন নি তাই আমিও পারবো না মেয়ে বলে মায়ের প্রতি নিজের দায়িত্ব টুকুন এড়াতে !
তবুও প্রয়োজনে জীবনের বাকীটা পথ একা থাকতে হলেও রাজী,কিন্তু মাকে ছেড়ে চাকুরী ছেড়ে স্বামীর সংসারের রাজরানী হতে চাই না। আশা রাখি একদিন অবশ্যই মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারবোই ইনশাআল্লাহ।
সমঝোতা তো থাকেই তবে জীবনের এই স্টেজে এসে কিছু কিছু সিধান্ত হয়তো সহজেই নিতে পারতাম যদি পূর্ন অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা থাকতো… আমার জীবনে মাকে কোন কিছুর বিনিময়েই আমি কম্প্রোমাইজ করতে পারবো না..তাতে যদি হতে হয় ডিভোর্সি.. না হয় তাই হলাম।
তবুও এই ছোট্ট একটা জীবন ঠিকই কেটে যাবে মা পাশে থাকলে,তবু নিজের আত্ম মর্যাদার সাথে আপোষ কখনওই নয়।
আরও পড়ুন ঃ
জিনসেং কি প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা? জিনসেং কি, জিনসেং খেলে গোপন ক্ষমতা বাড়ে কেন? জানুন
গবেষনা অনুযায়ী জিনসেং বীর্যস্খলনের সময় কাল কার্যকরী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভাবে বাড়ায়। জিনসেং মূলটির বয়স ছয় বছর হতে হবে। জিনসেং বর্তমানে সারা বিশ্বে একটি আলোচিত ঔষধি উদ্ভিদ, যার মূলে রয়েছে বিশেষ রোগ প্রতিরোধকক্ষমতা। হাজার বছর ধরে চীন, জাপান ও কোরিয়ায় জিনসেংয়ের মূল বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক, শক্তি উৎপাদনকারী, পথ্য ও টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
জিনসেং
জিনসেং কি প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা? জিনসেং কি, জিনসেং খেলে গোপন ক্ষমতা বাড়ে কেন? জানুন
জিনসেং ইংরেজিতে পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি মাংসল মূলবিশিষ্ট এক ধরনের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি পূর্ব এশিয়াতে, বিশেষ করে চীন, কোরিয়া ও পূর্ব সাইবেরিয়াতে, ঠান্ডা পরিবেশে জন্মে।শক্তিবর্ধক টনিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে জিনসেংয়ের প্রচলন আছে। জিনসেং শব্দটা উচ্চারণের সাথে যে দেশটির নাম উচ্চারিত হয় সেটি হলো কোরিয়া। জিনসেংকে অনেকে কোরিয়ান ভায়াগ্রা বলে থাকে।
জিনসেং কি
আসলে জিনসেং কী? হলো গাছের মূল। এই গাছটির নামই। হাজার হাজার বছর ধরে কোরিয়াতে জিনসেং ওষুধি গুণাগুণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জিনসেং গাছের মূল রোগ প্রতিরোধক এবং ইংরেজিতে বললে বলতে হয় । জিনসেংকে কোরিয়ানরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে। এর পুরো মূল সুপে দিয়ে দেয়, সিদ্ধ মূল খেতে হয়। চিবিয়ে চিবিয়ে এর নির্যাস নিতে হয়। জিনসেং দিয়ে মদও তৈরি হয়। এছাড়াও জিনসেং-এর রয়েছে নানাবিধ খাদ্য উপকরণ।
জিনসেং কে বলা হয় বা আশ্চর্য লতা। চীনে সহস্র বছর ধরে জিনসেং গাছের মূল আশ্চর্য রকম শক্তি উতপাদনকারী পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও এর রয়েছে নানাবিধ গুন।
চীন থেকে কেউ বেড়াতে আসলে সাধারণত দেখা যায় জিনসেং ও সবুজ চা কে গিফট হিসেবে নিয়ে আসতে। সেইরকম একটা গিফট পাওয়ার পরে ভাবলাম যে এই আশ্চর্য লতার গুন কে আসলে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নাকি এ শুধুই প্রাচীন চাইনিজ মিথ? ঘাটতে গিয়ে পেলাম নানা তথ্য। আমাদের দেশের মানুষেরা এটা সম্পর্কে কম-ই জানেন। তাই জিনসেং সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আজকের পোস্ট।
জিনসেং :
মুলত দুই ধরণের জিনসেং ঔষধি গুনসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত- আমেরিকান ও এশিয়ান। এর মধ্যে এশিয়ান জিনসেং অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকরী। এই দুই ধরণের জিনসেং কে বলা হয় প্যানাক্স জিনসেং।
প্যানাক্স শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ “panacea” থেকে যার অর্থ হলো বা সর্ব রোগের ঔষধ। জিনসেং সাদা (খোসা ছাড়ানো) ও লাল (খোসা সমেত) এই দুই রকম রূপে পাওয়া যায়। খোসা সমেত অবস্থায় এটি অধিক কার্যকরী। এদের মধ্যে থাকা জিনসেনোনোসাইড নামক একটি উপাদান এর কার্যক্ষমতার জন্য দায়ী। সাইবেরিয়ান জিনসেং নামে আরেক ধরণের গাছ আছে, যা জিনসেং বলে ভূল করা হলেও তা আসলে প্রকৃত জিনসেং না।
জিনসেং ও লিংগোত্থানে অক্ষমতাঃ
জিনসেং এর গুনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী যা প্রমানিত তা হলে, পুরুষের লিংগোত্থানে অক্ষমতা রোধে এর ভূমিকা। ৪৫ জন ইরেকটাইল ডিসফাংশন (লিংগোত্থানে অক্ষম ব্যাক্তি) এর রোগীর উপর একটি পরীক্ষা চালান। তাদের কে ৮ সপ্তাহের জন্য দিনে ৩বার করে ৯০০ মিগ্রা জিনসেং খেতে দেয়া হয়, এরপর দুই সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার ৮ সপ্তাহ খেতে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৮০% জানান যে, জিনসেং গ্রহনের সময় তাদের লিংগোত্থান সহজ হয়েছে। ২০০৭ সনে এ ৬০ জন ব্যাক্তির উপর করা এবং এ ৯০ জন ব্যাক্তির উপর করা অনুরুপ আরো দুটি গবেষনা প্রকাশিত হয়। ২০০২ সালের একটি গবেষনায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে, জিনসেং কিভাবে লিংগোত্থানে সহায়তা করে। পুরুষের যৌনাংগে নামে বিষেশ ধরণের টিস্যু থাকে। নাইট্রিক অক্সাইডের উপস্থিতিতে এই টিস্যু রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে লিংগোত্থান ঘটায়। জিনসেং সরাসরি দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমান বাড়িয়ে লিংগোত্থানে সহায়তা করে।
জিনসেং ও দ্রুত বীর্যস্খলন
যদিও কাচা জিনসেং এর মূল এই রোগে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা যায়না তবে জিনসেং এর তৈরী একটি ক্রীম পুরুষদের দ্রুত বীর্যস্খলন রোধে বিশ্বব্যাপী ব্যবহার হয়ে আসছে যা মিলনের একঘন্টা আগে লিঙ্গে লাগিয়ে রেখে মিলনের আগে ধুয়ে ফেলতে হয়। তে ২০০০ সনে প্রকাশিত একটি গবেষনা অনুযায়ী এটি বীর্যস্খলনের সময় কাল কার্যকরী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ভাবে বাড়ায়। আসলে, জিনসেং শব্দটাই এসছে চাইনিজ শব্দ “রেনসেং” থেকে। “রেন” অর্থ পুরুষ ও “সেন” অর্থ “পা”, যৌনতা বৃদ্ধিতে এর অনন্য অবদান এর জন্যই এর এইরকম নাম (অবশ্য এটি দেখতেও পা সহ মানুষের মত)।
জিনসেং ও
বলতে বুঝায় বিভিন্ন মানসিক ক্ষমতা যেমন মনযোগ, স্মৃতিশক্তি, কথা শোনার সাথে সাথে বুঝতে পারার ক্ষমতা,কল্পনাশক্তি, শেখার ক্ষমতা, বিচারবুদ্ধি, চিন্তা শক্তি ও সমস্যা সমাধান করে কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌছানোর ক্ষমতা। সোজা ভাষায় বলতে গেলে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি। জিনসেং স্নায়ুতন্তের উপর সরাসরি কাজ করে মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ২০০৫ সনে তে প্রকাশিত গবেষনা অনুযায়ী ৩০ জন সুস্বাস্থ্যবান যুবার উপর গবেষনা করে দেখা গিয়েছে যে জিনসেং গ্রহন তাদের পরীক্ষার সময় পড়া মনে রাখার ব্যাপারে পজিটিভ ভূমিকা রেখেছিল। একই জার্নালে ২০০০ সালে করা একটি গবেষনা, যুক্তরাজ্যের কর্তৃক ৬৪ জন ব্যাক্তির উপর করা একটি গবেষনা এবং চীনের কর্তৃক ৩৫৮ ব্যাক্তির উপর করা একটি গবেষনা অনুযায়ী জিনসেং মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধ ব্যাক্তির স্মরণশক্তি ও সার্বিক বৃদ্ধিতেও সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৫ সনে তে প্রকাশিত ইদুরের উপর করা গবেষনা অনুযায়ী জিনসেং মস্তিষ্কের কোষ বিনষ্টকারী রোগ যা স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট করে (যেমন পারকিন্সন ডিজিজ, হান্টিংটন ডিজিজ ইত্যাদি) সেসব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
জিনসেং ও ডায়াবেটিস
২০০৮ সনে ১৯ জন টাইপ ২ ডায়বেটিস এর রোগীর উপর করা গবেষনা অনুযায়ী জিনসেং টাইপ ২ ডায়বেটিস ম্যানেজমেন্টে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
জিনসেং ও কোলেস্টেরল
এ ২০০৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষনা অনুযায়ী, দিনে ৬ মিগ্রা হারে ৮ সপ্তাহ জিনসেং গ্রহণ খারাপ কোলেস্টেরল যেমন- এর মাত্রা কমাতে ও ভালো কোলেস্টেরল বা এর মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
জিনসেং ও ফুসফুসের রোগঃ
হচ্ছে ফুসফুসের অন্যতম কমন রোগ। এই রোগীদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে কফ থাকে ও কারো কারো ফুসফুসের ক্ষয় ঘটে। এ ২০০২ সনে প্রকাশিত ৯২ জন রোগীর উপর করা গবেষনা অনুযায়ী ১০০মিগ্রা ডোজে ৩ মাস জিনসেং গ্রহণে সার্বিক ভাবে এর অবস্থার উন্নতি হয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।
জিনসেং ও ত্বকঃ
জিনসেং বিভিন্ন এন্টি-এজিং ক্রীম ও স্ট্রেচ মার্ক ক্রীম এ ব্যবহৃত হয়। এইসব ক্রীম ত্বকের কোলাজেন এর উপর কাজ করে ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধ করে ও গর্ভবতী নারীদের পেটের ত্বক স্ফীতির কারণে তৈরী ফাটা দাগ নিরসন করে। তবে এটির জন্য জিনসেং এর ভূমিকা কতটুকু ও ক্রীমে থাকা অন্যান্য উপাদানের ভূমিকা কতটুকু তা জানা যায়নি।
জিনসেং ও ক্যান্সার
জিনসেং ক্যান্সার নিরাময় করতে না পারলেও আমেরিকার ম্যায়ো ক্লিনিক ক্যান্সার সেন্টারের গবেষকরা বলছেন, ক্যান্সারে ভুগছেন এমন রোগীদের দুর্বলতা কাটাতে জিনসেং সহায়ক। ৩৪০ রোগী নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ সপ্তাহ ধরে উচ্চমাত্রার জিনসেং ক্যাপসুল সেবন করেছেন এমন রোগীদের দুর্বলতা অন্যান্য পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণকারীদের তুলনায় অনেক কমেছে।
জিনসেং ও রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা
একটি গবেষনায় ২২৭ ব্যক্তির উপর ১০০মিগ্রা দিনে এক বার করে ১২ সপ্তাহ এবং আরেকটি গবেষনায় ৬০ ব্যাক্তির উপর ১০০মিগ্রা দিনে ২বার করে ৮ সপ্তাহ জিনসেং প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে যে তাদের দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো ( যেমন ইত্যাদি) কার্যকর পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। তার মানে জিনসেং রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।
জিনসেং ও আরো কিছু রোগ
মেয়েলি হরমোন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বৃদ্ধি ও শক্তি বর্ধক এনার্জি ড্রিংক হিসেবে জিনসেং দারুন কার্যকরী। জিনসেং রক্ত তরল করে স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। আরো কয়েকটি রোগ নিরসনে জিনসেং ভূমিকা রাখে বলে লোকজ ব্যবহার হতে জানা গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই রোগ গুলোর ক্ষেত্রে গবেষনা করে জিনসেং এর কার্যকরীতা অস্বীকারও করেন নি আবার নিশ্চিত ভাবে মেনেও নেননি। এইসব রোগের মধ্যে আছে, সরদি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ক্যান্সার (পাকস্থলি, ফুসফুস, যকৃত, ত্বক, ডিম্বাশয়), রক্তশূণ্যতা, বিষন্নতা, পানি আসা, হজমে সমস্যা ইত্যাদি।
ব্যবহারবিধিঃ
এর মত অনুযায়ী এশিয়ান জিনসেং পূর্নবয়স্করা ২-৩ সপ্তাহ টানা খেয়ে ২ সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার খেতে পারবেন। আমেরিকান জিনসেং টানা ৮ সপ্তাহ খেয়ে ২ সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার খেতে পারবেন। যেহেতু এটি একটি অতি কার্যকরী ওষুধ, তাই দীর্ঘদিন ব্যবহারের কোন রকম ক্ষতি হতে পারে ভেবে এটি বেশিদিন ব্যবহার করতে মানা করা হয় (যদিও দীর্ঘ ব্যবহারে ক্ষতির কথাটার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই).. জিনসেং সাধারণত ট্যাবলেট, পাউডার, ড্রিঙ্কস হিসেবে খাওয়া হয়, এবং এদের গায়েই ব্যবহারবিধি লেখা থাকে। ট্যাবলেট বা পাউডার এর জন্য ডোজঃএর রিপোর্ট অনুযায়ী, মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি ও লিংগ উত্থান এর জন্য ৯০০ মিগ্রা পাউডার করে দৈনিক ৩ বার, শক্তি বা স্ট্যামিনা বৃদ্ধি ও ডায়বেটিস এর জন্য এর ডোজ হলো ২০০ মিগ্রা পাঊডার করে দিনে ১ বার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১০০ মিগ্রা করে দিনে ২ বার। এর জন্য ডোজ হলো ০.২ মিগ্রা। সরাসরি মূল খেলে ০.৫-২ গ্রাম মুল খাওয়া যাবে দৈনিক ১ বার। মূল কিনে খাওয়া টাই সবচেয়ে সাশ্রয়ী হয়। মূল টা চিবিয়ে খাওয়া যায়, গুড়া করে জিভের নীচে রেখে দিয়ে খাওয়া যায়, পানিতে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পানি সহ খাওয়া যায় অথবা পানিতে ৫ মিনিট ফুটিয়ে পানি সহ খাওয়া যায়।
কোথায় পাবেনঃ
সাইন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে, ঢাকা সিটি কলেজের গেটের অপর প্বার্শে অবস্থিত সাইন্স ল্যাবরেটরি বিক্রয় কেন্দ্রে এটি এনার্জি ড্রিঙ্কস হিসেবে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও মডার্ণ হারবাল গ্রুপ এবং স্কয়ার ফার্মাসিঊটিকাল লিমিটেড এর ওয়েব সাইট এ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এরা জিনসেং কে ট্যাবলেট হিসেবে বিক্রি করে। যেই পণ্য ই কিনেন না কেন, দেখে নিবেন লেবেল এর গায়ে Panax ginseng লেখা আছে কিনা, কারণ এটাই অরিজিনাল এশিয়ান জিনসেং। গেণ্ডারিয়া রেলগেট, দয়াগঞ্জ বাজার, সায়েদাবাদ ব্রিজের ঢালে, ঠাঁটারি বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে ঔষধি গাছ, লতাপাতা বিক্রির পাইকারি দোকান। এইসব জায়গায় খোজ নিয়ে দেখতে পারেন যে সরাসরি মূল পাওয়া যায় কিনা।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
জিনসেং এর সবচেয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিকৃয়া হলো ঘুমের সমস্যা। আগেই বলেছি, জিনসেং স্নায়ুতন্ত্র কে উত্তেজিত করে ও মানসিক ক্ষমতা বাড়ায়। উত্তেজিত স্নায়ুর কারণে ঘুম আসতে দেরি হয়, যেমন টা হয় কফি খাওয়ার পরে। অন্যান্য সাধারণ সমস্যার মধ্যে আছে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, হার্ট বিট বাড়া এবং ব্লাড প্রেশারে তারতম্য হওয়া (সাময়িক)।
যারা খাবেন নাঃ
বাচ্চা, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের এটা খেতে নিষেধ করা হয়। জিনসেং স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে তাই স্নায়ুর উপর কাজ করে এমন অন্য কোন ওষুধ (যেমন ঘুমের অষুধ, বিষন্নতার ওষুধ ইতাদি) এর সঙ্গে এটা খাওয়া উচিত না, নয়ত স্নায়ু অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে যাবে। জিনসেং রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে, তাই হার্টের রোগীরা যারা ইতমধ্যে রক্ত তরল করার অন্যান্য ওষুধ ( যেমন খাচ্ছেন, তারা এদের সঙ্গে জিনসেং খাবেনা না। জিনসেং ব্লাড সুগার কমাতে সহায়তা করে, তাই ডায়বেটিস রোগীদেরো ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এটা খাওয়া উচিত যাতে ওষুধের সাথে জিনসেং গ্রহণে সুগার যেন বেশি কমে না যায়।
অতিকর্মক্ষম রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে কিছু রোগ হয়, যেমন এদের বলা হয়। জিনসেং যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তাই সাধারণ মানুষ এতি খেলে উপকৃত হবে কিন্তু এর রোগীদের খাওয়া উচিত না। জিনসেং মেয়েলি হরমোন ইস্ট্রোজেন এর পরিমাণ বাড়ায়, তাই যাদের হরমোনের সমস্যা আছে তাদের এটা খাওয়া উচিত কিন্তু যাদের ব্রেস্ট, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার আছে তাদের খাওয়া উচিত নয় কারণ অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন এইসব ক্যান্সারে আরো সহায়ক ভূমিকা রাখে। জিনসেং ব্লাড প্রেশারেও তারতম্য ঘটায় তাই হাই ও লো প্রেশারের রোগীদেরো নিয়মিত খাওয়া উচিত না। সোজা ভাষায় বলতে গেলে, জিনসেং এর ভালো গুনগুলোর কারণেই আসলে একে সতর্ক ভাবে গ্রহণ করা উচিত (যদিও উপরের আশংকা গুলো কোনটাই বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত না)।
জিনসেং কোরিয়াতে এবং দেশের বাইরে জনপ্রিয় হলেও এর চাষাবাদ কিন্তু বেশ কঠিন। বর্হিবিশ্বে জিনসেং-এর প্রচুর চাহিদা মেটানোর জন্য কোরিয়ার প্রদেশের পুঞ্জী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে জিনসেং-এর সফল চাষাবাদ চলছে সেই ১১২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। এই পুঞ্জী এলাকা জিনসেং দেশ হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত। ষোলশো শতাব্দী থেকেই এই এলাকায় জিনসেং খামার গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এটি কোরিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত জিনসেং উৎপাদনকারী এলাকা।
পেনিস সহজে বড়, মজবুত ও মোটা করার উপায় কি?
পুঞ্জীতে পাহাড়ে ৪০০-৫০০ মিটার উচ্চতায় জিনসেং-এর চাষ করা হয়। পাহাড়ের শীতল আবহাওয়া এবং উর্বর মাটি পুঞ্জী এলাকার জিনসেং-কে বলশালী করে তোলে। প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথমদিকে পুঞ্জীতে জিনসেং উৎসব হয়ে থাকে। এই উৎসবে খেত থেকে সদ্য তোলা জিনসেং-এর স্বাদ গ্রহণ করা যায়। পরিভ্রমণকারীরা জিনসেং তুলবার অভিজ্ঞতাও নিতে পারে এই উৎসবে। জিনসেং উৎসবে আয়োজন করা হয় নানা রকম প্রতিযোগিতার। এর একটি হলো দি বেস্ট জিনসেং। অর্থাৎ কোন জিনসেং মূলটি দেখতে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
এর জন্য ৪টি শর্ত হলো:
(১) মূলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং একই সাথে মূলটি দেখতে একজন মানুষের আকৃতির কতটা কাছাকাছি হয়েছে।
(২) মূলের বাইরের স্তরের পুরুত্ব এবং মূলের ওজন।
(৩) মূলের দৈর্ঘ্য এবং
(৪) জিনসেং মূলটির বয়স ছয় বছর হতে হবে।
গাছের বয়স ছয় বছরের উপরে চলে গেলে মূল শক্ত হয়ে যায় এবং এর ওয়ুধি গুণাগুণ হ্রাস পায়। অবশ্য যে সব জিনসেং বন-বাদাড়ে প্রাকৃতিকভাব্ জন্মায় সেগুলোর মূলের গুণাগুণ ছয় বছরের পরও বিদ্যমান থাকে।
আমেরিকা এবং ইউরোপে ফাংশনাল ফুড হিসেবে এটি বহুল প্রচলিত। এর বহুমুখী উপকারিতা, ঔষধি গুণের কথা বিবেচনা করে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন উৎপাদন পদ্ধতির উদ্ভাবন চলছে, যাতে করে এই মহামূল্যবান ঔষধিটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে উৎপাদন করা যায়। এর চাষাবাদ বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। মাঠপর্যায়ে মাটিতে চাষাবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট নিম্ন তাপমাত্রার প্রয়োজন।
কোরিয়ান জিনসেং পরিবারেরধরনের মাংসল মূল বিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ প্রজাতি; যা পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে চীন, কোরিয়া ও পূর্ব সাইবেরিয়ায় ঠান্ডা পরিবেশে জন্মে এবং এর মূলটিই মূলত ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘প্যানাক্স’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো বা সর্বরোগের ওষুধ।”
জিনসেং মূলের উৎপাদন প্রসঙ্গে ড. সোহায়েল বলেন, ‘জিনসেং কোরিয়ায় এবং বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হলেও এর চাষাবাদ বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। মাঠপর্যায়ে মাটিতে চাষাবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট নিম্ন তাপমাত্রার প্রয়োজন। এ ছাড়া এর বৃদ্ধি খুব ধীর, চাষাবাদও বেশ পরিশ্রমসাধ্য ও ব্যয়বহুল। এভাবে চাষ করলে চারা থেকে বাজারজাত যোগ্য অবস্থায় পৌঁছাতে কমপক্ষে পাঁচ-সাত বছর লেগে যায়। এটি দূষণ, সংক্রমণ ও কীট-পতঙ্গের আক্রমণ এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন হ্রাসের ঝুঁকিতে থাকে। তাই বিভিন্ন দেশে জিনসেংয়ের চাহিদা মেটানোর জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে জিনসেং মূলের টিস্যু থেকে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জিনসেং মূল উৎপাদন করা হয়।’
মহৌষধি জিনসেং-এ রয়েছে প্রায় ৩০ প্রকারের জিনসেনোসাইডস। এ ছাড়া এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ, ফ্যাট-দ্রবীভূতকারী পদার্থ, প্যানাক্সান নামক পেপটাইডোগ্লাইকেন, মিনারেলস প্রভৃতি।
জিনসেংয়ে আরো রয়েছে ফেনলিক যৌগ, যার রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ, পলি-অ্যাসিটিলিন যা ক্যানসার কোষ ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। জিনসেং স্নায়ুতন্ত্রের ওপর সরাসরি কাজ করে যেমন : মানসিক ক্ষমতা, মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারার ক্ষমতা, কল্পনাশক্তি, শেখার ক্ষমতা, বিচার বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি ও সমস্যা সমাধান করে কোনো একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি করে।
এ ছাড়া জিনসেং টাইপ ২ ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টে কার্যকরী বলে প্রমাণিত। বর্তমানে ওষুধের পাশাপাশি প্রসাধন এবং খাদ্যশিল্পে জিনসেং বহুল ব্যবহৃত। যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সাবান-ক্রিম, সানস্ক্রিন, টুথপেস্ট, হেয়ারটনিক, শ্যাম্পু, এনার্জি ড্রিংক, ক্যান্ডি, বিভিন্ন বেভারেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এ ক্ষেত্রে অমিত সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষক। ড. সোহায়েল মনে করেন, বাংলাদেশের মাটিতে জিনসেং চাষ প্রায় অসম্ভব হলেও প্রযুক্তির মাধ্যমে এর উৎপাদন, উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব।
বর্তমানে কোরিয়ান জিনসেং এ দেশের মাটিতেও জন্মানো যায় কি না এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। এর মাধ্যমে সাফল্য অর্জিত হলে অর্থনৈতিক ও কৃষির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্যাশন ফল এবং হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে লেটুসের চাষ বিষয়ে গবেষণা করে সফলতার মুখ দেখেছিলেন ড. সোহায়েল। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্যাশন ফল এবং হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে লেটুসের চাষে তাঁর উদ্ভাবিত বিশেষ পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের ফলে মানুষের মনে এ নিয়ে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল।’
ড. সোহায়েল আশা করেন, জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে জিনসেং ছাড়াও ননি, একনেশিয়া, সর্পগন্ধা, গিংকো, থানকুনি এবং অন্যান্য মূল্যবান ঔষধির সফল উৎপাদন এবং বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ওষুধ এবং প্রসাধনী কোম্পানিগুলোতে সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে।
এমন সাফল্য দেখে কোনো বেসরকারি উদ্যোক্তা এগিয়ে এলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সোহায়েল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হ্যাঁ, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অবশ্যই চুক্তিতে যাব। তবে এ ক্ষেত্রে সবার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
Reactions

Post a Comment

0 Comments