Ticker

6/recent/ticker-posts

রুবিকস কিউব খেলনা বিষাক্ত রাসায়নিক


রুবিকস কিউব খেলনায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। মন ও মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে খেলার খেলনা, রুবিকস কিউব এ পুনর্ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য থাকতে পারে যা মস্তিষ্কের সাধারণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, শিশুর বুদ্ধি বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। 

ইতালির ফিরেঞ্জে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত পারসিসটেন্ট অর্গ্যানিক পলিউট্যান্ট (পপ্‌স) বিষয়ক এক বিজ্ঞানবিষয়ক সম্মেলনে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো এ মতামত ব্যক্ত করে। বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ও বর্জ্য নিয়ে এসডো গবেষণামূলক কাজ করে আসছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি দোকান থেকে ১২টি রুবিক্স কিউব সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য চেক প্রজাতন্ত্রে পাঠায়, যার ৮টি নমুনার মধ্যে উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ পিবিডিই, পিবিটি বিটিবিপিই, ওসি আইএনডি অক্সি বিডিই এবং ডেকাবিডিই পাওয়া যায় বলে গবেষণায় উল্লেখ করে। আইপেন (বিশ্বব্যাপী সুশীল সমাজ ও নিরাপদ রাসায়নিক নীতি ও চর্চারনেটওয়ার্ক) আর্নিকা চেক প্রজাতন্ত্রের একটি পরিবেশবিষয়ক সংস্থা যারা মননবিকাশকারী এধরনের খেলনায় বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতির এ গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ সহ ১৬টি দেশের রুবিক্স কিউব জাতীয় খেলনায় বিষাক্ত পলিব্রোমিনেটেড ডাইফিনাইল ইথার অর্থাৎ অক্টাবিডিই, ডেকা বিডিই পাওয়া গেছে। অক্টা বিডিই এবং ডেকা বিডিই ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটার্ডেন্ট পদার্থ যা প্রাথমিক ভাবে বৈদ্যুতিক পণ্যের প্লাস্টিকের আবরণে ব্যবহৃত হয়। এসব রাসায়নিক পদার্থগুলো মানুষের হরমোন প্রক্রিয়ায় ও শিশুর মেধা বিকাশে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। পাজল কিউব-এর ৪১টি নমুনা ও চুলের ক্লিপ, হাতের ব্যান্ড, হকিস্টিক সহ আরো কিছু নমুনার প্রায় ৮৫ শতাংশের মধ্যে ১ থেকে ১০৮ পিপিএম অক্টা বিডিই পাওয়া গেছে এবং ৮৯ শতাংশ নমুনায় ১ থেকে ২৯৩ পিপিএম ডেকাবিডিই নামক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে। পপ্‌সবিষয়ক স্টকহোম কনভেনশনে ইতিমধ্যে অক্টাবিডিই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ২০০৪ সালে ফিলিপাইন সরকার এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক রাসায়নিক চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং আশা করা যাচ্ছে, পপ্‌স রিভিউ কমিটির ২০১৬-এর সেপ্টেম্বরের মিটিংয়ে ডেকাবিডিও নিষিদ্ধ করা হবে। রুবিক্স কিউবের অনুরূপ পাজল খেলনাগুলোও শিশুদের বুদ্ধিমত্তা ও মেধাবিকাশে সাহায্য করে। কিন্তু পুনর্ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য থেকে আসা ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটার্ড্যান্টস-এর উপস্থিতি শিশুদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।  ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার প্রাকৃতিক সম্পদ ও শক্তি রক্ষা করে ঠিকই কিন্তু এটি এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ পুনরায় প্রকৃতিতে ফিরে না আসে। আর্নিকার জরিপবিষয়ক সমন্বয়কারী জিৎকা স্ত্রাকোভা বলেন, এটি  মানবদেহ ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
টক্সিক কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ ও এসডো’র মহাসচিব ড. শাহ্‌রিয়ার হোসেন বলেন, দূষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য, তাই সকল প্রকার ভোগ্যপণ্য যেমন শিশুদের খেলনা ও অলংকারে নিষিদ্ধ রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য আমি সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই। কারণ এসব পণ্যে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারের সতর্কতামূলক নীতিমালা বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে নেই।  ড. শাহ্‌রিয়ার হোসেন আরো বলেন, আমাদের দেশের শিশু ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই আমি নীতিমালা নির্ধারকদের অনুরোধ জানাই যে তারা যেন কোনো প্রকার পপ্‌স জাতীয় পদার্থ যেমন অক্টাবিডিই ও ডেকাবিবিউ রয়েছে এমন পণ্য পুুনর্ব্যবহারের অনুমতি না দেন। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যে ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যুক্ত পণ্যের পুুনর্ব্যবহার হয় তা আমাদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
২০০৯ সালে স্টকহোম কনভেনশনে সমগ্র বিশ্বে পেন্টাবিডিই ও অক্টাবিডিইর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কিন্তু ওই চুক্তিটিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্তপণ্যের পুনর্ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ করা হয়নি। আইপেনের সিনিয়র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জো ডি গেন্‌িগ বলেন, এধরনের পণ্যের পুনর্ব্যবহার বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা এই বিপদজ্জনক ফ্লেম রিটারডেন্টস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো সতর্কতামূলক বাণী দেয় যে, শিশুদের মননবিকাশমূলক খেলনা থেকে প্রাপ্ত ই-বর্জ্য বিভিন্ন প্রকার বিষাক্ত কেমিক্যালের উৎস হিসেবে কাজ করে। যা শিশুদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুর ক্ষতিসাধন করে ও মেধা বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। এসডো, ইতালির ফিরেঞ্জে পপ্‌স-এর ওপর বিজ্ঞানবিষয়ক সম্মেলনে শিশুদের মেধা বিকাশে সহায়ক এধরনের খেলনায় বিষাক্ত কেমিক্যালের ব্যবহারের ওপর একটি বৈশ্বিক জরিপ প্রকাশনার সম্ভাবনার কথা জানায়।
Reactions

Post a Comment

0 Comments