Ticker

6/recent/ticker-posts

কত টাকার মালিক ছিলেন মীর কাশেম

ঢাকা: মানিকগঞ্জের সাধারণ পরিবার থেকে আসা মীর কাশেম আলী চট্টগ্রামে পড়ালেখার সুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে। তার পিতা চট্টগ্রামে তৎকালীন টিএ্যান্ডটির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন। কলেজ জীবনে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় নেমে পড়েন। নেতৃত্ব দেন ইসলামী ছাত্রসংঘের। স্বাধীনতাকামীদের ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো চট্টগ্রামের ওল্ড টেলিগ্রাফ রোডের মহামায়া নামের ভবনটিতে। ফলে এ ভবনটি ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ঐতিহাসিক বিচারের রায় নিয়ে শনিবার তাকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসির দড়িতে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য ধনকুবের মীর কাশেম আলীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে।
মীর কাশেম আলীর বিত্তভৈবব ও সম্পদ নিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ সম্পদের মালিক। যার পরিমাণ সরকারী খাতায় হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে বেসরকারীভাবে প্রচার আছে তার অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। বিদেশী ব্যাংকেও রয়েছে তার কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ও সম্পদ। এসব অর্থের অধিকাংশ আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে। তার নিজ নামে সম্পদ প্রদর্শন করা হয়েছে তুলনামূলক কম। তবে অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমাণ আরও হাজার কোটি টাকা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, যা নানা নামে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যোগানেও রয়েছে এ অর্থ। তবে বেশিরভাগ সম্পদই বিভিন্ন কোম্পানির ট্রাস্ট ও প্রাইভেট সংস্থার নামে।
ঢাকা কর অঞ্চল-৫ এর সার্কেল ৫০ এর করদাতা এই মীর কাশেম আলী। যার ইটিআইএন নম্বর ০৭৬-১০৩-৯৬৬৩। পৈত্রিকসূত্রে তিনি ঢাকার মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরের ২৮৭ নম্বর প্লটের বহুতল ভবনের মালিক। তার ব্যক্তিগত নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একতা সোসাইটির ৫ কাঠা জমি ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সাড়ে ১২শতক জমি রয়েছে। এছাড়া ধানমন্ডির বহুতল ভবন কেয়ারি প্লাজার অবিক্রীত প্রায় ২শ’ বর্গমিটারের মালিকানাও তার। অবশিষ্ট অংশ তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ারের পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১শ’ এবং দুই ছেলে, তিন মেয়ের নামে রয়েছে ৫শ’ শেয়ার। এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ১১৩ শেয়ার, কেয়ারি লিমিটেডের ১৪ হাজার শেয়ার, কেয়ারি টেলিকমের ১০ হাজার, কেয়ারি টুলস এ্যান্ড সার্ভিসেসের ১হাজার শেয়ার তার নিজের নামে। চট্টগ্রামে কেয়ারি ইলিশিয়াম নামের বহুতল বিশিষ্ট কমার্শিয়াল ও আবাসিক ভবনের মালিকানাও তার। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের চলাচলের জন্য কেয়ারি সিন্দবাদ নামের বেশ কয়েকটি প্রমোদ তরির মালিকও তিনি। আয়কর বিভাগের তথ্য অনুযায়ী কেয়ারি ঝর্ণা লিমিটেডের ২০, কেয়ারি তাজ লিমিটেডের ৫, কেয়ারি সান লিমিটেডের ৫, কেয়ারি স্প্রিং লিমিটেডের ২০, সেভেন স্কাই লিমিটেডের ১শ’, মীর আলী লিমিটেডের ২৫ এবং দিগন্ত মাল্টি মিডিয়া লিমিটেডের ১শ’ শেয়ার রয়েছে এই মীর কাশেম আলীর নামে।
মীর কাশেম আলী কেয়ারি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য, ইবনে সিনা হাসপাতালের পরিচালক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের সদস্য এবং ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য। বিভিন্ন ইসলামিক দেশের আর্থিক অনুদানে তিনি দেশে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রাবেতা আল আলম আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট, ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশন এবং এ্যাসোসিয়েশন অব মাল্টি পারপাস ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন থেকে তিনি নিয়মিত ভাতা নিতেন। এছাড়াও তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এ্যান্ড বিজনেসম্যান চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল্লামা ইকবাল সংসদ, আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনির্ভাসিটি চট্টগ্রাম, দারুল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজি এ্যান্ড ফিশ, বাইতুশ শরফ বাংলাদেশ, ইসলামিক ট্রাস্ট ও ইসলামিক ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। এছাড়া তার মালিকানায় বিভিন্ন সংস্থার নামে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার ঋণ আছে বলেও প্রদর্শিত আছে তার ট্যাক্স ফাইলে।
দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হলে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাশেম আলী গ্রেফতার হন। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালে তাকে ফাঁসির দন্ড দেয়া হয়। গত ৩০ নবেম্বর ফাঁসির দন্ড থেকে খালাস চেয়ে তার পক্ষ থেকে আপীল করা হয়। গত ৮ মার্চ আপীলের রায়ে ফাঁসির দন্ড বহাল রাখা হয়। গত ১৯ জুন তিনি রিভিউ আবেদন করেন। গত ৩০ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপীল বিভাগ তার রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা টালবাহানা চালিয়ে গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন। এতেই তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরে পূর্ববর্তী সকল প্রক্রিয়া অবসান হয়ে শনিবার রাতে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়
Reactions

Post a Comment

0 Comments