Ticker

6/recent/ticker-posts

জল্লাদ শাজাহানের জীবনের মর্মস্পর্শী করুণ কাহিনী ! জেনে হতবাক হয়ে যাবেন

জল্লাদ শাজাহান এর আগে যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদের ভূমিকা পালন করেছে। তবে জল্লাদ শাজাহান অন্য সব জল্লাদের চেয়ে আলাদা।
একসময় চাকরি করতেন সেনাবাহিনীতে জল্লাদ শাজাহান। কিন্তু ভাগ্য তাকে টেনে নিয়ে গেছে অন্ধকার জগতে। এরপর থেকে জেলের সাথে নিজের জীবনকে জড়িয়ে নিয়েছেন। আটক হয়ে ৩৬ মামলায় ১৪৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন তিনি। তবে এখন তিনি আসামী হিসেবে নয় সবার কাছে পরিচিত জল্লাদ হিসেবে।
জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে কারাবন্দি। এই জল্লাদ এ পর্যন্ত মোট ৩২ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন। জল্লাদ শাহজাহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ ঘাতককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরে জল্লাদের ভূমিকা পালন করেন শাজাহান। এছাড়া এদেশের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি খুকু, মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ শাহজাহান। এদেশে তিনিই একমাত্র জল্লাদ যিনি একরাতেই দুই কারাগারে ৪ আসামিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছেন।
জেনেনিন জল্লাদ শাজাহানের জীবনের করুণ কাহিনীঃ জল্লাদ শাহজাহানের পরিচয় পুরো নাম মো: শাহজাহান ভূঁইয়া। জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ। জন্মস্থান নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তিন বোন এক ভাই। বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া। মাতা সব মেহের।
পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম খাস হাওলা ফ্রি প্রাইমারি স্কুল, মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন পারলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং সর্বশেষ উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন নরসিংদী সরকারি কলেজে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত। ১৯৭৪ সালে তিনি এইচএসসি পাশ করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর হচ্ছে- ২৬৯১৬৪৯১০৬১২৯।সেনাবাহিনীতে ছিলেন ৩ বছর ছোট থেকেই সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড তাকে খুব আকর্ষণ করতো।
বিশেষ করে তাদের শৃঙ্খলাবোধ তার সব থেকে বেশি ভালো লাগতো। তাই মনে প্রাণে সব সময় স্বপ্ন দেখতেন সুযোগ পেলেই সেনাবাহিনীতে চাকরি করবেন। বাবার মাধ্যমে তিনি একবার খবর পান সেনাবাহিনীতে লোক নেওয়া হচ্ছে। এরপর সেনাবাহিনীর চাকরির জন্য অংশগ্রহণ করলে তিনি টিকে যান। যথা সাধ্য তিন বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পর বড় অফিসারদের ধমকের কারণে জিদ করে বাড়ি চলে আসেন। তিনি বলেন, অফিসারদের কমান্ড আমার ভালো লাগতো না। কারণ আমি তাদের থেকে পড়াশোনা এবং পারিবারিক দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিলাম।
তিনি চাকরি করবেন না বলে ১১ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তার সেনাবাহিনীতে চাকরি করার স্বপ্নের কবর এখানেই রচিত হয়। নরসিংদী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ স্বাধীনতার যুদ্ধ জয়ের ৪ বছর পর। তখন তিনি তরতাজা তরুণ। এইসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছেন ২ বছর আগে। মনের অজান্তে ভালো লেগে যায় কমিউনিস্ট পার্টি।
সেখানে তার নাম লেখিয়ে ফেলেন। তার পারফরমেন্স দেখে কেন্দ্রে থেকে তাকে ডেকে পাঠানো হয়।
তাকে নরসিংদী জেলার কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব দিতে চাইলে তিনি রাজি হয়ে যান। ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি জেলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অপরাধ জগতে প্রবেশের ইতিবৃত্ত ছেলে হিসেবে শাহজাহান খুবই ভালো ছেলে ছিলেন। পারতপক্ষে কারও উপকার ছাড়া ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন না।
তবে তিনি প্রচণ্ড বন্ধু পাগল মানুষ ছিলেন। একবার তার গ্রামে নারী ঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। শাহজাহানের দুই বন্ধুসহ তার নামে অভিযোগ ওঠে। গ্রামে তাকে নিয়ে বিচারে বসা হয়। সেই বিচারে তাকে অপরাধী প্রমাণিত করে তাকে সাজা দেওয়া হয়।
এরপর থেকেই তার ক্ষিপ্ততা শুরু। তিনি অপমান সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই অপমানের চরম প্রতিশোধ নিবেন। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। তারপর অনেক লম্বা ইতিহাস।
Reactions

Post a Comment

0 Comments